উলট কম্বল গাছের ডাটার ১২টি উপকারিতা

অ্যালোভেরার ১২টি উপকারিতা ও অপকারিতাপ্রিয় পাঠকবৃন্দ সকলকে আমার ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আজকের এই আর্টিকেলটিতে উলট কম্বল গাছের ডাটার ১২টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবো। উলট কম্বল একটি ভেষজ উদ্ভিদ। উলট কম্বল গাছের ডাটার অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই অজানা। উলট কম্বলের বৈজ্ঞানিক নাম Abroma augustum এবং ইংরেজিতে Devils Cotton নামে পরিচিত। 
উলট কম্বল গাছের ডাটার ১২টি উপকারিতা
চলুন আর না দেরি করে না উলট কম্বল গাছের ডাটার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে উলট কম্বল গাছের ডাটার উপকারিতা গুলো জানতে পারবেন।

ভূমিকা

উলট কম্বলের গাছ বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতে পাওয়া যায়। উলট কম্বল একটি ভেষজ ঔষধি গাছ সাধারণত ৭-১০ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে ও বেশি মোটা হয় না। উলট কম্বল গাছের ছাল, পাতা, মূল ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উলট কম্বলের গাছ বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে হয়ে থাকে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও অন্যান্য দেশে হয়ে থাকে। 
তবে উলট কম্বল গাছের আদি নিবাস এশিয়ার প্রধান অঞ্চলগুলো। উলট কম্বল গাছের পাতার সামনের দিকে সরু ও সবুজ রঙের। পাতার বোটা ও কচি ডাল খয়েরি লাল রংয়ের হয়ে থাকে। গাছের বাকল আঁশযুক্ত,পানিতে ভিজালেও পানি নষ্ট হয় না। ফুলের রং খয়েরি নির্দিষ্ট বয়স অনুযায়ী গাছে ফুল ধরে। ফুল দেখতে অনেক সুন্দর হয়ে থাকে।

ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম

ওলট কম্বল গাছের মূল থেকে শুরু করে পাতার ডাল ফুল ও ফল সব কিছুই মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই ভেজষ উদ্ভিদ হতে অনেক ধরনের ওষুধ তৈরি করা হয়। আমরা এখন জানব ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। ওলট কম্বল গাছের মূল পানি দিয়ে পরিষ্কার করে বেটে নিতে হবে এরপর সেটি সকালে উঠে হালকা গরম পানি সঙ্গে মিশিয়ে সেবন করতে হবে তাহলে খুব দ্রুত মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব সমস্যা দূর হবে। 
ওলট কম্বলের পাতার ডাল কুচি কুচি করে ৫০০ গ্রাম পানিতে এক রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে হালকা চিনি অথবা আখের গুড় দিয়ে খেতে পারেন এতে আপনার স্বল্পস্রাব দূর হয়ে যাবে। ওলট কম্বলের গাছের কিছু কাঁচা ছাঁল বেটে ৫-১০ গ্রাম পানিতে মিশিয়ে থেকে হালকা চিনি দিয়ে দিনে দুইবার সেবন করলে সহবাসে ব্যথা দূর হয়।ওলট কম্বলের গাছের পাতা ১০-১৫ মিনিট সিদ্ধ করে নিয়মিত সকাল ও রাতে ঘুমানোর আগে সেবন করলে মহিলাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

ওলট কম্বলের ওষুধ কি কি উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে অনিয়মিত পিরিয়ড, গর্ভপাত রোধ, সহবাসে ব্যথা, জরায়ুর চুলকানি, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, জরায়ুর স্থানচ্যুতিসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে ওলট কম্বল গাছ অত্যন্ত কার্যকরী অবদান রাখে। ওলট গাছ থেকে যেগুলো ওষুধ উৎপন্ন করা হয় তার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ওলট কম্বল ওষুধ তৈরিতে যেসব উপাদান ফর্মুলা প্রয়োজন হয় সেগুলো নিম্ন তুলে ধরা হলো।
  • ওলট কম্বল
  • আওবেল
  • শলফা বীজ
  • চায়নারুট
  • শুকনা পুদিনা
  • সারাকা ইন্ডিকা
  • শিয়ালকাটা
  • কপচিনি
  • জটামাংসী
  • তজ
  • বড় এলাচসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে ওষুধ তৈরি করা হয়।
এগুলো উপাদান দিয়ে ওলট কম্বলের ঔষধ তৈরি হয়ে থাকে।

উলট কম্বল গাছের ডাটার ১২টি উপকারিতা

উলট কম্বল গাছের মূল ও ডাটা, পাতা, ফুল ও ফলসহ মানব দেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে। তা নিয়ে নিম্নে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
১. অনিয়মিত ঋতুস্রাবঃ উলট কম্বল গাছের মূল পানি দিয়ে পরিষ্কার করে বেটে হালকা গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে একবার খেলে মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব দূর হবে।
২. শরীরের ব্যথাঃ উলট কম্বলের বীজের তেল শরীরের ব্যাথা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
৩. জরায়ুর চুলকানিঃ উলট কম্বল গাছের মূলের ছাঁল পিষে হালকা চিনি দিয়ে সকাল সন্ধ্যা সেবন করলে এই রোগ দূর হয়।
৪. জরায়ুর স্থানচ্যুতিঃ উলট কম্বল গাছের মূল পিষে ৫ গ্রাম পানিতে চিনিসহ মিশিয়ে খেলে এই রোগ দূর হয়।
৫. প্রস্রাবের জ্বালাপোড়াঃ কয়েকটি ফুল বৃন্ত পিষে ২৫০মিলি পানি ও হালকা চিনিসহ খেলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৬. গর্ভপাত রোধঃ উলট কম্বল গাছের পাতার রস ১০-১৫ মিলি নিয়মিত সেবন করলে রোগ দূর হয়।
৭. শ্বেতস্রাবঃ মূলের ছাঁল পিষে ৩ গ্রাম রস সকাল-সন্ধ্যা পানিসহ খেতে হবে।
৮. মহিলাদের বুক ধড়ফড় করাঃ উলট কম্বল গাছের কাঁচা ছাঁল পিষে ১০ গ্রাম পানি মিশিয়ে ছেঁকে সাথে অর্জুন গাছের ছাঁল ৫ গ্রাম হালকা চিনি দিয়ে খেলে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।
৯. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াঃ উলট কম্বল গাছের পাতা ১০-১৫ মিনিট সিদ্ধ করে সেই পানি সকালে খালি পেটে অথবা রাত্রে ঘুমানোর আগে খাওয়া হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
১০. ঘন কালো উজ্জ্বল চুলঃ উলট কম্বল গাছের পাতা রসের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল মিশ্রিত করে হালকা গরম করে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন চুলে ব্যবহার করলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আপনার চুল ঘন কালো উজ্জ্বল করবে।
১১. নারীর ও পুরুষদের শুক্রক্ষয় ও শুক্রস্বল্পতাঃ ২-৩ টি তাজ ফুল বৃন্তা পিষে হালকা চিনিসহ এক কাপ দুধ সকাল-সন্ধ্যা খাওয়া হলে এর সুফল পাওয়া যায়।
১২. গবাদিপশুর রোগ-বালাইঃ উলট কম্বল গাছের মূল থেকে এক ধরনের আঠা জাতীয় রস বের হয় যা গবাদি পশুর পাতলা পায়খানা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাছাড়া হাঁস- মুরগির বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

লেখক মন্তব্য

প্রিয় পাঠক বৃন্দ, আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলটিতে উলট কম্বল গাছের ডাটার ১২টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। উলট কম্বল গাছের ডাটার ১২টি উপকারিতাসহ ওলট কম্বল খাওয়ার নিয়ম ও ওলট কম্বলের ওষুধ কি কি উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় তা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনার কোন উপকার আসলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। অথবা আর্টিকেল বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। এমন আরো আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url