কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮টি উপকারিতা - কাঠবাদাম ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম
কিসমিসের ৩০টি উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুনকাঠবাদাম বিভিন্ন পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ জনপ্রিয় একটি খাবার এবং ওজন কমাতে
কাঠবাদাম গুরুত্ব অপরিসীম। কাঠবাদামকে ড্রাই ফুড বলা হয়ে থাকে। আজকের এই
আর্টিকেলটিতে কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকারী ১৮টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে
পারবেন। অতএব প্রিয় পাঠকবৃন্দ, কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকারী ১৮টি উপকারিতা
সম্পর্কে জেনে উপকৃত হবেন।
আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কাঠবাদাম খাওয়ার
কার্যকরী১৮ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আর দেরি না করে আজকের
মূল বিষয়গুলো নিয়ে নিম্নে তুলে ধরা হলো।
ভূমিকা
কাঠবাদামে অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ পাবেন যেমন ভিটামিন ই, কপার, ম্যাগনেসিয়াম ও
ক্যালসিয়াম। এছাড়া রয়েছে পটাশিয়াম, জিংক, ফসফরাস ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধ করতে
বিশেষভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কাঠবাদাম বৃহদাকৃতির গাছের ফলের বীজ যার
বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia Catappa। কাঠবাদাম গাছের ফলের ভেতরে কয়েকটি বীজ থাকে,
সেই বীজ গুলোকে আমরা কাঠবাদাম বলে থাকি।
এই কাঠবাদাম ওজন কমাতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে কেননা এতে রয়েছে ফ্যাট,
আন্টি-অক্সিডেন্ট, ফাইবার যা ওজন কমানোর পাশাপাশি ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগ
প্রতিরোধ করতে সয়হতা করে। নিয়মিত ভাবে কাঠবাদাম খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ
প্রতিরোধ দূর করতে সহায়তা করে। তাছাড়া ছোট বাচ্চাদের মস্তিষ্কের গঠনে
গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী ভূমিকা রাখে কাঠবাদাম।
কাঠবাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম
কাঠবাদাম বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায় কাঁচা, শুকনো বা ভাজা কিংবা পানিতে ভিজিয়ে
রেখে। তবে কিভাবে খেলে বেশি উপকার পাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কাঠবাদাম কাঁচা খেলে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় যা ভাজা খেলে পাওয়া যায় না।
বাদাম ভাজার ফলে তার পুষ্টিগুণ গুলো নষ্ট হয়ে যায়।
কাঠ বাদামে ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি বিদ্যমান তাপের ফলে এগুলো পুষ্টিগুণ নষ্ট
হয়ে যায়। কাঠবাদাম কাঁচা খাওয়ার চেয়ে ভাজা খেতে সকলেই পছন্দ করে। কিন্তু
ভাজার চেয়ে কাঁচা খেলে সবচেয়ে বেশি উপকারী পাওয়া যাবে। তবে রাতে কাঠবাদাম
পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে আরো উপকার পাওয়া যায়। আশা করি পাঠকবৃন্দ
কাঠবাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম বুঝতে পেরেছেন।
কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ২০টি উপকারিতা
দৈনন্দিন জীবনে কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আপনি যদি
প্রতিদিন নিয়মিত কাঠ বাদাম খেতে পারেন, তাহলে আপনার শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ
প্রতিরোধ করতে পারবেন। নিম্নে কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ২০টি উপকারিতা আলোচনা
করা হলো।
১. ওজন নিয়ন্ত্রণ করেঃ কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল
মাত্রায় কমায়। তাছাড়া কার্যকরী কোলেস্টেরল গুলো মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় এতে
স্বাভাবিক ভাবে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
২. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ প্রতিদিন চার থেকে ছয়টি কাঠবাদাম
ভিজিয়ে খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ছোট বাচ্চাদের
বুদ্ধি বিকাশের জন্য কাঠবাদাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। কাঠবাদামে রয়েছে
রিবোফ্লেভিন ও এল ক্যারনিটিন যা মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ।
৩. হার্ট ভালো রাখেঃ কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন,
ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম যা হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এবং
ভিটামিন ই থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
৪. ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ কাঠবাদামে কোলোন থাকায় ক্যান্সার প্রতিরোধে
সাহায্য করে। কেননা বাদামের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ যা কোলোন
ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ কাঠবাদাম পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি উপাদান যা রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন কি ও
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।
৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ কাঠবাদাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। কাঠবাদামে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকরী
ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় বলা হয়েছে খাবারের পর কাঠবাদাম খাওয়া
ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
৬. কোলেস্টেরল কমায়ঃ কাঠবাদাম শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল গুলো মাত্রায়
কমায় এবং কার্যকরী উপাদান শরীরের ভালো কোলেস্টেরল গুলো মাত্রায় বাড়িয়ে দেয়।
ফলে খারাপ কোলেস্টেরল মাত্রায় কমতে শুরু করে।
৭. হাড় সুস্থতা ও মজবুত করণেঃ কাঠবাদামে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস,
মিনারেল ও ভিটামিন থাকায় হাড় ও দাঁত সুরক্ষা দেয়। ফসফরাস হাড় ও দাঁতকে মজবুত
করতে সহায়তা করে। এবং অস্টিওপরোসিস হাড়ের ক্ষয় রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা
রাখে।
৮. কোষ্ঠকাঠিন্য দূরকরণেঃ প্রায় অধিকাংশ মানুষ কুষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা
দেয়। কাঠবাদামের রয়েছে ফাইবার সমৃদ্ধ পুষ্টিগুগুণ ও পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ খাবার
যা হজম করতে সাহায্য করে। সুতরাং কাঠবাদাম কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কার্যকরী
ভূমিকা পালন করে।
৯. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ কাঠবাদাম নিয়মিত খাওয়ার ফলে মানবদেহের উচ্চ
রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। রক্তে থাকা কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখার ফলে উচ্চ
রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায়।
১০. স্টক প্রতিরোধঃ নিয়মিত কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে স্টক সম্ভাবনা কমে যায়।
কেননা বিভিন্ন রকমের স্টক হয়ে থাকে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অধিকওজন
সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে এগুলো প্রতিরোধ করা যায়।
১১. স্তন ক্যান্সারঃ মহিলাদের বর্তমান স্তন ক্যান্সারের বৃদ্ধি পেয়েছে,
নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। কেননা কাঠবাদামে
ভিটামিন ই ও আন্টিঅক্সিডেন্ট পুষ্টি উপাদান থাকায় ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা
করে।
১২. গর্ভাবস্থায়ঃ গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরে বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টির
অভাব দেখা দেয় , সেই সময় নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে পুষ্টি উপাদান গুলো পেয়ে থাকি
ও নানা ধরনের সমস্যা দূর করে।
১৩. প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করণেঃ কাঠবাদাম পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি
করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কেননা কাঠবাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে মিনারেল,
ভিটামিন ‘ই’ ও উপকারী ফ্যাট যা পুরুষের শুক্রানুর গুণগত মান ও পরিমান বৃদ্ধি করতে
বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
১৪. শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কাঠবাদাম মানবদেহের জন্য শারীরিক শক্তি
বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। নিয়মিত অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি কাঠবাদাম প্রতিদিন
খেলে মানবদেহের শক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
১৫. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
১৬. কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে এতে থাকা ভিটামিন ডি
শরীরের কোষের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সয়হতা করে।
১৭. চুল মজবুত করণেঃ কাঠ বাদামে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন
বি১ ও ভিটামিন বি২ যার ফলে চুলকে মজবুত এবং আকর্ষণীয় করে।
১৮. মনোপজকালীন সমস্যা দূরঃ নারীদের বিশেষ করে ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়স হলে
মাসিক বন্ধ হয়ে যায় এটিকে মেডিকেলের ভাষায় মনোপজ বলা হয়। এই সময় কাঠবাদাম
খেলে মনোপজকালীন সমস্যাটা কিছুটা কমে যায়।
কাঠবাদাম ভিজে খাওয়ার নিয়ম
বিশেষজ্ঞদের মতে কাঠবাদাম ভিজিয়ে রেখে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
কাঠবাদাম পানিতে ভিজিয়ে রাখলে এটি খেতে অনেকটা নরম মনে হয় এবং অতি সহজে হজম
হয়ে যায়। তাছাড়া এটি ভিজিয়ে রাখলে সাইট্রিক এসিড পরিমাণ কমে যায় যার মাধ্যমে
খুনির শোষণ করতে কোন প্রকার সমস্যা সৃষ্টি হয় না।
কাঠবাদাম এমন একটি পুষ্টিকর উপাদান যা খেতে সুস্বাদু ও শরীরের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। অনেকের মাথায় প্রশ্ন জাগতে পারে কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে
কি উপকার পাওয়া যায় এবং কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে? একটি পাত্রে পরিমাণ মতো পানি
নিয়ে হালকা লবন ও কাঠবাদাম দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন।
তারপর ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর সেই ভেজানো পানি ফেলে দিয়ে কাঠবাদাম গুলো তুলে খেয়ে
নিন। এভাবে নিয়মিত কাঠবাদাম ভিজিয়ে রেখে খেলে উপাদানের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করছি আর্টিকেলটি পড়ে কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮টি
উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এই আর্টিকেলটিতে আপনার মাঝে কোন
প্রশ্ন বা মতামত থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। যেহেতু কাঠবাদাম আমাদের
শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী তাই আপনিও নিয়মিত কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম গুলো পড়ে
খেতে পারেন।
কাঠবাদাম খাওয়ার কার্যকরী ১৮টি উপকারিতা এ সম্পর্কে বিস্তারিত নিয়ে লেখা
আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে কমেন্ট ও বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আরো
অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আর্টিকেল পড়তে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url